Header Ads

Header ADS

আলোর রহস্যময়তা - আইনস্টাইন এর চোখে

বিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে ছোটবেলায় আলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেনি এমন মানুষ মনে হয় একজনও খুজে পাওয়া যাবে না। পদার্থ বিজ্ঞানের স্যারেরা ক্লাসে আলো পড়াচ্ছেন আর জিজ্ঞেস করছেন “আলোর গতিবেগ কত?”, এ ছিল অতি স্বাভাবিক দৃশ্য। স্কুলের একজন বিজ্ঞানের ছাত্র আলোর প্রতিফলন, প্রতিসরন, ব্যাতিচার পড়ছে, কিন্তু তখনো কি সে জানে বিজ্ঞানের সবচেয়ে রহস্যপূর্ণ চরিত্র টির সাথে সে পরিচিত হয়ে গেছে? তবে আলো এমনি এক রহস্য যে তার মজা নেয়ার জন্য আপনাকে বিজ্ঞানের ছাত্র হতে হবে না! যে কেউ এর কৌতূহল উদ্দীপক দিক গুলোর সাথে পরিচিত হতে পারে।
সাধারন ভাবে মনে হতে পারে আলো আর এমন কি রহস্য? আমরা প্রতিদিন তো দেখছি, সূর্যের আলো, লাইটের আলো এমন আরও কত কি। আসলে এই চিন্তা টার সাথে খুব মিল ছিল পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম দিক কার বিজ্ঞানী দের। তারা মোটেও আলো কে পাত্তা দেয় নি। তারও বেশ কিছু পরে ১৬৭৬ সালে অলাউস রমার সর্ব প্রথম আলোর গতিবেগ মাপেন। যাই হোক, আলোর বৈজ্ঞানিক ইতিহাস এই লেখার মূল উপজীব্য না। সরাসরি আসল কথায় চলে আসা যাক।


কিছু প্রশ্নের উকিঝুকি এবং আইনস্টাইন
১৯০৬ সালে আইনস্টাইন প্রকাশ করেন বিখ্যাত এবং নিঃসন্দেহে তাঁর সেরা আবিস্কার “Theory of Relativity” (আশ্চর্যের বিষয় এটা তাঁকে কোন নোবেল পুরস্কার এনে দেয় নি!)। তারও বেশ কয়েক বছর আগে থেকে তিনি আলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করে আসছিলেন। বলে রাখা ভাল “Theory of Relativity” এর মূল ভিত্তিই ছিল আলোর গতি। সম্ভবত তখন থেকে আলোকে নিয়ে বিজ্ঞানী দের চিন্তাভাবনা বড় ধরনের প্রশ্নের সম্মুখিন হয় সাথে সাথে রচিত হয় পদার্থবিজ্ঞানের এক নতুন অধ্যায়ের।
আলো সম্ভবত আইনস্টাইন সবচেয়ে পছন্দের বিষয় ছিল। তাই ভেবে ভেবে এমন সব বিষয় তাঁর মাথায় আসতে থাকল যা কিনা ওই সময় সবার কল্পনার বাইরে ছিল। আমেরিকার ক্যালটেক ইউনিভারসিটির একজন প্রফেসর তো বলেই দিলেন, আইনস্টাইন “Theory of Relativity” আবিস্কার করে বর্তমান বিজ্ঞানী দের মুক্তচিন্তাকে দেয়ালে আবদ্ধ করে দিয়েছেন! কথা টির অর্থ হল, বিজ্ঞানিরা হয়ত “Theory of Relativity”  ১০০ বছর ভেবে ভেবে বের করবেন এবং সাথে আরও নতুন কোন আবিস্কার যুক্ত হবে, তা ১০০ বছর আগে আইনস্টাইন আবিস্কার করে বসে আছেন!
আচ্ছা এবার বলা যাক কি সব প্রশ্নের উকিঝুকি দিতো আইনস্টাইনের মনে? তাঁর আবিস্কারের ধরন দেখে বোঝা যায়, তিনি আলোর উপরে বসে আলোর গতিতে চললে কি হয় তাই খুজে বের করতে চেয়েছিলেন। আর এটা সম্ভবত পদারথবিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর একটি!

সহজ কিন্তু মোটেই সহজ নয়!
 এটা বলার আগে একটু ছোটবেলার কথা মনে করে দেখি, “Theory of Relativity” পড়ানোর সময় আমাদের স্যার রা যেই ভুল টা সবসময় করেন, “Reference Frame”, লরেঞ্জ রুপান্তর পড়িয়ে পড়িয়ে বিষয়টির মজা পুরোপুরি নষ্ট করে দেন। তাই একদম সহজে বলার চেষ্টা করি, আপনি যদি আলোর গতি ঠিকঠাক মত বুঝতে পারেন তাহলে বলতে হবে “Theory of Relativity” এর শতকরা ৫০ ভাগ আপনি বুঝে গেছেন! কিভাবে? বলছি, “Theory of Relativity” বলছে আলোর গতি একটি ধ্রুবক এবং যে কোন পরিস্থিতে সবার কাছে তা সমান থাকবে (আসলে এভাবে বললাম কারন তা নাহলে ওই স্যার দের মত করে বুঝাতে হবে!) । এটাই “Theory of Relativity”  এর মূল ভিত্তি। শুনে অনেকে মনে মনে হাসতে পারেন, “এটা আর বলার দরকার কি? এটা তো সবাই জানে!”। আসলে মজা টা এখানেই।
একটা ছোট্ট উদাহরন দিয়ে বুঝাই, বোঝার সুবিধার্থে ধরে নেই আলোর গতি ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার। এখন একটি রাস্তা দিয়ে একটি গাড়ি আর একজন মানুষ যাচ্ছে, গাড়িটির গতি ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার এবং মানুষটির গতি ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটার। তাঁদের পিছন দিক থেকে যদি কেউ একটি টর্চের আলো নিক্ষেপ করে তাহলে কি ঘটবে? পদারথবিজ্ঞানের সাধারন সুত্র বলে যে, গাড়ির ভেতরের লোকদের কাছে মনে হবে আলোর গতিবেগ (৫০-৩০ = ২০) কি.মি./ঘণ্টা এবং মানুষটির কাছে তা মনে হবে (৫০-১০ = ৪০) কি.মি./ঘণ্টা। কিন্তু সত্যি উত্তর টি হল দুজনের কাছেই আলোর গতিবেগ হবে ৫০ কি.মি./ঘণ্টা। এটা হজম করা একটু কঠিন হতে পারে, কিন্তু আসলে এটা ১০০ ভাগ সত্যি। অর্থাৎ এক রহস্যময় উপায়ে আলো নিজের গতি দুজনের কাছেই কিছুটা বাড়িয়ে নিয়েছে। মাইকেলসন-মরলি পরীক্ষা এর সত্যতা প্রমান করে দেখিয়েছে!

কিছু একটা গণ্ডগোল তো আছেই!
 আইনস্টাইন তখন এই রহস্য ধরার চেষ্টা করতে লাগলেন। এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে বের হয়ে আসলো সময় প্রসারন এবং দৈর্ঘ্য সংকোচন, যা কিনা আরও রহস্যময় দুটি ঘটনা! বুঝিয়ে বলি, আলো তার গতির ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেয় না অর্থাৎ সব পরিস্থিতিতে সমান, শুধু এই নীতি টা ঠিক রাখার জন্য সে সময়কে পর্যন্ত প্রসারিত করে দিতে পারে! কিভাবে? আচ্ছা এই ক্ষেত্রে আমরা আলোর আসল গতি টাকেই নিব। আমরা জানি তা প্রায় ৩০০০০০০০ কি.মি./সেকেন্ড। ধরা যাক দুই বন্ধুর একজন পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক এবং অন্য জন একটি রকেটের পাইলট। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় বন্ধু একটি মিশনে মহাকাশে যাত্রা করে। তার রকেট টি খুবই আধুনিক, তাই গতিবেগ আলোর গতির অর্ধেক বা ১৫০০০০০০ কি.মি./সেকেন্ড। তার সম্পূর্ণ মিশনেই সে এই গতি ধরে রেখেছিল। এখন ১০ বছর পর তার মিশন শেষ করে সে যখন পৃথিবীতে ফেরত আসবে তখন কি সব ঠিকঠাক থাকবে? না, একটা সমস্যা হবে। পৃথিবীতে বাস করা বন্ধুর জন্য এই ১০ বছর ঠিক ১০ বছরই থাকবে কিন্তু পাইলট বন্ধুর কাছে মনে হবে সে পার করেছে ১১.৫৪ বছর! অর্থাৎ সে মনে করবে এটা ২০১৯ না ২০২০ সালের মাঝামাঝি! দুজনের বয়স যদি ২০০৯ সালে ৪০ হয়ে থাকে তাহলে আজকে পৃথিবীর বন্ধুর ৫০ কিন্তু পাইলট বন্ধুর ৫১.৫৪! অর্থাৎ আলো কেবল মাত্র তার গতিবেগ কে ধ্রুবক রাখার জন্য রাতারাতি সময় টাকেই প্রসারিত করে দিয়েছে! এটা যদি হজম না হয় তাহলে বলি, আনবিক ঘড়ির মাধ্যমে পরীক্ষা করে এর সত্যতা পাওয়া গেছে ১০০ ভাগ!
দৈর্ঘ্য সংকোচন নিয়ে একটু বলি, এটাও অনেক টা সময় প্রসারনের মতই। একই উদাহরন দিয়ে বলা যাক, সেই রকেট টার দৈর্ঘ্য মনে করি ১০০ ফুট। রকেট টা যখন চলতে শুরু করবে এবং তার গতিবেগ যখন আলোর গতির অর্ধেক হয়ে যাবে তখন রকেটের ভিতরে থাকা পাইলট বন্ধুর কাছে তো সব ঠিকই থাকবে কিন্তু ঝামেলা হবে পৃথিবীর শিক্ষক বন্ধুর সাথে। সে দৈর্ঘ্য কে ১০০ ফুট নয়, দেখবে ৮৬.৬ ফুট ! অর্থাৎ তার কাছে রকেটের আসল দৈর্ঘ্য এর চেয়ে ১৩.৪ ফুট কম মনে হবে।  এখানেও সেই আলোর গতির কারসাজি!
সমীকরণ গুলো মূল লেখায় ব্যাবহার করিনি কারন টা অনেকের কাছে বিরক্তির কারন হতে পারে। যারা নিজেরা হিসেব করতে চান তাঁদের জন্য –
L = L'*√(1-v2/c2)
t' = t*√(1-v2/c2)

এখানে t এবং t' হচ্ছে যথাক্রমে প্রসারিত সময় এবং স্বাভাবিক সময়। একইভাবে Lএবং L' হচ্ছে সংকুচিত দৈর্ঘ্য এবং স্বাভাবিক দৈর্ঘ্য। v হচ্ছে রকেটের গতি এবং c হচ্ছে আলোর গতি।
আসলে আলোর বিশাল রহস্য ভাণ্ডারের সামান্য একটি কণিকা হয়ত এখানে আলোচনা করলাম। ধন্যবাদ মহামতি আলবার্ট আইনস্টাইন কে। তার মাধ্যমেই তো আমরা আজ এই অপার রহস্য সম্পর্কে জানতে পেরেছি।

No comments

Theme images by RBFried. Powered by Blogger.