আমার ছাদের বাগান (পর্ব -৫)
বেশ কয়েকদিন সামান্য ব্যাস্ততার কারনে ব্লগ লেখায় হাত দিতে
পারিনি। এদিকে অনেকেই ফেসবুক এ একটি নির্দিষ্ট পোস্ট এর ব্যাপারে রিকুয়েস্ট করেছিলেন।
আবার গাছগুলোও বেশ বড় হয়ে গিয়েছে তাই আর দেরি না করে ভাবলাম লিখে ফেলি। ছাদের
বাগান নিয়ে যেহেতু ধারাবাহিক ভাবে লেখা দিচ্ছি তাই এই লেখাটিকেও একই ধারাবাহিকতায় দিয়ে
দিলাম। আশাকরি যারা ছাদ বাগানি আছেন তাদের কিছুটা হলেও উপকার হবে।
প্রথমে বলে নেই আজকের লেখাটি ছাদে কিভাবে মাটির বেড বানাবেন
তা নিয়ে। ছাদে অনেকেই মাটির বেড বানানোর সাহস পান না। মনে করেন ছাদ ভিজে স্যাঁতস্যাঁতে
হয়ে কোন ক্ষতি হবে কিনা। আসলে সঠিক নিয়মে এবং সঠিক মৌসুমে আপনি অনায়াসে মাটির বেড
বানিয়ে শাক বুনতে পারবেন। শাক বলতে মূলত লাল শাক, ডাঁটা শাক (শুধু পাতা খেতে
পারবেন, ডাঁটা খুব একটা বড় হবে না), পালং শাক, ধনিয়া ইত্যাদি। অর্থাৎ যেসব শাকের শিকড়
মাটির বেশি গভীরে যায় না। যেমন মূলা বা পুই এর ক্ষেত্রে আপনি বেড বানিয়ে কোন লাভ
নেই। এবার আশা যাক সঠিক মৌসুম। শীতকাল হোল মাটির বেড এর জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মৌসুম। মাটির
বেড এর প্রধান শত্রু হচ্ছে অতিরিক্ত পানি যা শীতকালে জমার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই
চলে। কয়েকটি ছবি আমি দিয়ে দিচ্ছি, তাহলেই বুঝতে পারবেন পানি জমে যাওয়া বলতে কি বুঝাচ্ছি।
প্রথম কাজ একটি বড় মোটা পলিথিন জোগাড় করা। সাধারণত কুরবানির
পশুর মাংস কাটার জন্য বাজারে বড় যেই পলিথিন পাওয়া যায় সেগুলো হলেই চলবে। আমিও সেই
পলিথিন গুলোই ব্যাবহার করেছি। আমার খরচ হয়েছে ১২০ টাকা। আমার পলিথিনটার মাপ ছিল মোটামুটি
৫ ফিট বাই ৫ ফিট। একটু পরিস্কার করে শুকিয়ে নেয়া ভাল কারন তাতে মাটি গুলো সহজে ছড়িয়ে
দেয়া যায়। তারপর ১৫-২০ টা থান ইট জোগাড় করে নিন। তারপর ছবিতে যেভাবে দেখানো আছে
সেভাবে ইট গুলো দিয়ে একটি চারকোনা বক্স তৈরি করুন। তার উপর পলিথিন টা বসিয়ে দিন। কোনা
গুলোতে সামান্য চাপ দিয়ে ভূমির সাথে মিশিয়ে দিন। এবার মাটি ফেলার পালা। মাটি ফেলার
সময় খেয়াল রাখবেন মাটির উচ্চতা যেন ২ ইঞ্চির বেশি না হয়। আমার টায় আছে ১.৫ ইঞ্চি। মাটি
তৈরির সময় সার মিশিয়ে নিতে পারেন অথবা মাটি ফেলার পরে উপরে সার ছিটিয়ে দিতে পারেন।
আমি কোন রাসায়নিক সার ব্যাবহার করিনি এবং কেবলমাত্র জৈব সার ব্যাবহার করেছি। আপনারা
চাইলে কেঁচোসারও ব্যাবহার করতে পারেন। আমার জৈব সার লেগেছে প্রায় ১ কেজি। এখানে আমার
খরচ হয়েছে ৫০ টাকা।
মাটি ফেলার পর ছবির মত মাঝে আইল বা ড্রেন করতে পারেন আবার সব
বীজ একসাথে মিশিয়েও বুনতে পারেন। আমি আইল গুলো দিয়েছি দুটো কারনে, প্রথমত আমি তিন
রকম শাক আলাদা করে বুনতে চেয়েছি, আর দ্বিতীয় কারন, আইলের প্রান্তে পলিথিনে ফুটো করে
দিয়েছি যাতে অতিরিক্ত পানি চলে যেতে পারে। আর আমি জৈব সারটা মাটি ফেলার পরে ছিটিয়ে
দিয়েছি। তারপর সামান্য নেড়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছি।
এবার বীজ বোনার পালা। বীজ নিয়ে কেবল ছিটিয়ে দিন। সব জায়গায় যেন
সমান ভাবে বীজ যায় টা খেয়াল রাখবেন। তিন রকম শাক মিলিয়ে সর্বসাকুল্যে আমার বীজ
লেগেছে ৫০ গ্রামের মত। দাম ২০ টাকা। বীজ ছেটানোর পরে তার উপর হাল্কা করে আবার মাটি
ছিটিয়ে দিন। তাহলে পানি দেয়া হলে বীজ গুলো ভেসে যাবে না। আপনার বেড তৈরি।
পানি দেয়ার ক্ষেত্রে খুব সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার, কারন
পানি জমে গেলেই আপনার শাক গুলোর মারাত্মক ক্ষতি হবে। আমার ছবিগুলো দেখলে বুঝতে
পারবেন লালশাকের বেড এর মাঝে কিছু অংশে শাক কিছুটা কম। আসলে কিছুটা পানি জমে যাওয়ার
কারনে ওই অংশের গাছ গুলো মরে যায়। যাই হোক, পানি দিবেন খুব সাবধানে, যদি একবেলা
পানি কমও দেন তাহলে সমস্যা নেই কিন্তু কোন মতেই অতিরিক্ত পানি দেয়া যাবে না। ব্যাস,
এই একটা বিষয় খেয়াল রাখলেই চলবে। আরেকটু বলে নেই, বীজ বুনে দেয়ার পর যদি ভাল বীজ
হয় তাহলে ৩-৪ দিনের মধ্যেই চারার মাথা দেখা যাবে। আর আশা করা যায় ৩৫-৪৫ দিনের মধ্যেই
আপনি শাক খেতে পারবেন।
No comments